প্রার্থনা কবিতার প্রশ্ন উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । দ্বাদশ শ্রেণী চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা । class 12 prarthona kobita question answer by Rabindranath Thakur
প্রার্থনা (চিত্ত যেথা ভয়শূন্য...)
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই কবিতাটি এক মহৎ প্রার্থনা। কবি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন, যেন ভারতবর্ষ প্রকৃত অর্থে মুক্ত ও উন্নত দেশে পরিণত হয়।
কবির স্বপ্নের দেশ এমন এক জায়গা—
যেখানে মানুষের মন ভয়হীন হবে এবং সবাই মাথা উঁচু করে গৌরবের সাথে বাঁচবে।
জ্ঞান ও শিক্ষা যেখানে স্বাধীন হবে, সংকীর্ণতা বা বিভাজনের দেওয়াল মানুষের মধ্যে কোনো বিভেদ সৃষ্টি করবে না।
মানুষের কথা ও প্রকাশ সত্য ও হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে উঠে আসবে, কৃত্রিম বা ভণ্ডামিমুক্ত হবে।
কাজের প্রবাহ বাধাহীনভাবে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে এবং মানুষ অসংখ্য সফলতা অর্জন করবে।
ক্ষুদ্র কুসংস্কার, নিরর্থক প্রথা বা অন্ধাচার যাতে মানুষের চিন্তা ও বিবেচনাশক্তিকে স্তব্ধ করে না দেয়।
মানুষের সাহস, শক্তি ও পৌরুষ খণ্ডিত বা দুর্বল না হয়ে ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ় থাকবে।
সর্বদা ঈশ্বরই মানুষের কর্ম, চিন্তা ও আনন্দের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবেন।
শেষে কবি ঈশ্বরকে সম্বোধন করে বলছেন— হে পিতা, তোমার কঠিন আঘাত বা কঠোর শিক্ষার মাধ্যমে ভারতবর্ষকে সেই প্রকৃত স্বর্গে জাগিয়ে তোলো, যেখানে স্বাধীনতা, জ্ঞান, সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।
সারসংক্ষেপ
এই কবিতার মূল বক্তব্য হলো – একটি ভয়শূন্য, জ্ঞানসমৃদ্ধ, কুসংস্কারমুক্ত, সাহসী এবং সত্য-ন্যায় প্রতিষ্ঠিত দেশের স্বপ্ন। কবি প্রার্থনা করছেন যেন ভারতবর্ষ সেই আদর্শ অবস্থায় পৌঁছে যায়।
প্রার্থনা – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির
চিত্ত = মন
ভয়শূন্য = যেখানে কোনো ভয় নেই
উচ্চ শির = মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা, গৌরব ও মর্যাদা
অর্থ: যেখানে মানুষের মন ভয়মুক্ত এবং সবাই মর্যাদা নিয়ে মাথা উঁচু করে বাঁচে।
জ্ঞান যেথা মুক্ত, যেথা গৃহের প্রাচীর আপন প্রাঙ্গণতলে দিবসশর্বরী বসুধারে রাখে নাই খণ্ড ক্ষুদ্র করি,
জ্ঞান মুক্ত = জ্ঞান যেখানে স্বাধীনভাবে প্রবাহিত হয়, অজ্ঞতা বা কুসংস্কারে আবদ্ধ নয়।
গৃহের প্রাচীর = ঘরের দেয়াল (সংকীর্ণতা, সীমাবদ্ধতা)
দিবসশর্বরী = দিনরাত
বসুধা = পৃথিবী
খণ্ড ক্ষুদ্র = টুকরো টুকরো, ছোট ছোট ভাগ
অর্থ: যেখানে জ্ঞানের স্বাধীনতা আছে এবং সংকীর্ণ গৃহের দেয়াল দেশ ও পৃথিবীকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে না।
যেথা বাক্য হৃদয়ের উৎসমুখ হতে উচ্ছ্বসিয়া উঠে,
বাক্য = কথা
উৎসমুখ = উৎসমুখ (যেখান থেকে প্রবাহ শুরু হয়)
উচ্ছ্বসিয়া = উৎফুল্ল, উচ্ছ্বসিত হয়ে
অর্থ: যেখানে মানুষের কথা হৃদয়ের গভীর উৎস থেকে সত্য ও আন্তরিকভাবে উঠে আসে।
যেথা নির্বারিত স্রোতে দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায় অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়,
নির্বারিত = বাধাহীন | স্রোত = প্রবাহ
কর্মধারা = কাজের ধারা | অজস্র = অসংখ্য
সহস্রবিধ = হাজার রকম
চরিতার্থতা = সার্থকতা, সফলতা
অর্থ: যেখানে কাজের ধারা বাধাহীনভাবে দেশে দেশে, দিক দিকান্তরে প্রবাহিত হয় অসংখ্য সফলতার মধ্যে দিয়ে।
যেথা তুচ্ছ আচারের মরুবালুরাশি বিচারের স্রোতঃপথ ফেলে নাই গ্রাসি,
তুচ্ছ আচারে = ছোটখাটো কুসংস্কার, নিরর্থক নিয়মকানুন
মরুবালুরাশি = মরুভূমির বালির স্তূপ (অর্থাৎ নির্জীব, ফলহীন জিনিস) | স্রোতঃপথ = প্রবাহের রাস্তা
গ্রাসি = গ্রাস করা, বন্ধ করে দেওয়া
অর্থ: যেখানে ছোটোখাটো কুসংস্কার বা নিরর্থক প্রথার মরুভূমি মানুষের চিন্তার প্রবাহকে গ্রাস করে না।
পৌরুষেরে করে নি শতধা,
পৌরুষ = শক্তি, সাহস
শতধা = শত টুকরো করে ফেলা
অর্থ: যেখানে মানুষের সাহস ও শক্তিকে খণ্ড খণ্ড করে দুর্বল করে ফেলা হয়নি।
নিত্য যেথা তুমি সর্ব কর্ম চিন্তা আনন্দের নেতা,
নিত্য = সর্বদা
সর্ব কর্ম = সমস্ত কাজ
চিন্তা = ভাবনা
আনন্দ = সুখ
নেতা = পথপ্রদর্শক
অর্থ: যেখানে সর্বদা তুমি (ঈশ্বর) সব কাজ, চিন্তা ও আনন্দের পথপ্রদর্শক হয়ে থাকো।
নিজ হস্তে নির্দয় আঘাত করি, পিতঃ; ভারতেরে সেই স্বর্গে করো জাগরিত।
নির্দয় আঘাত = কঠিন আঘাত, কঠোর শিক্ষা
পিতঃ = হে পিতা (ঈশ্বরকে সম্বোধন)
জাগরিত = জাগ্রত করো, জাগাও
অর্থ: হে ঈশ্বর, তোমার কঠোর হাতে আঘাত দিয়ে আমার দেশ ভারতবর্ষকে সেই স্বর্গসম স্থানে জাগিয়ে তোলো।
বিশেষ নোট
আসল ভাবনা হলো একটি মুক্ত, ভয়শূন্য, সংকীর্ণতাহীন, সত্য, জ্ঞানসমৃদ্ধ এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত দেশ।
কবির প্রার্থনা ঈশ্বরের কাছে—ভারতবর্ষ যেন এমন "স্বর্গে" জাগ্রত হয়।
********* প্রার্থনা’ কবিতায় কবি কীভাবে ভারতবর্ষকে স্বর্গে জাগরিত করার কথা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো। [সংসদ নমুনা প্রশ্ন] ৫
********** প্রার্থনা’ কবিতায় কবি কী প্রার্থনা করেছেন ? সেই প্রার্থনা কীভাবে পূরণ হতে পারে ? ২+৩=৫
******* চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, উচ্চ যেথা শির”- এখানে ‘যেথা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? উদ্ধৃতাংশের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো। ২+৩=৫
*******প্রার্থনা’ কবিতাটির মূল বক্তব্যবিষয় নিজের ভাষায় লেখো। ৫
******প্রার্থনা’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো। ৫
****** দেশে দেশে দিশে দিশে কর্মধারা ধায়’-‘কর্মধারা’ কথার অর্থ উল্লেখ করে উদ্ধৃত অংশটির তাৎপর্য আলোচনা করো।
পোস্ট পড়ার পর ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করতে ভুলবেন না ।
( After reading post not forgetting comments. ) 👆