"HS সেমেস্টার 3/ বাংলা | স্বামী বিবেকানন্দের 'বাঙ্গালা ভাষা' প্রবন্ধ লাইন বাই লাইন ব্যাখ্যা/ bangala Bhasa
বাঙ্গালা ভাষাস্বামী বিবেকানন্দ
[১৯০০ খ্রিস্টাব্দে ২০শে ফেব্রুয়ারি আমেরিকা-হইতে 'উদ্বোধন' পত্রিকার সম্পাদককে স্বামীজী যে পত্র লিখেন, তাহা হইতে উদ্ধৃত]
আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকে সংস্কৃতয় সমস্ত বিদ্যা থাকার দরুন, বিদ্বান্ এবং সাধারণের মধ্যে একটা অপার সমুদ্র দাঁড়িয়ে গেছে। বুদ্ধ থেকে চৈতন্য রামকৃষ্ণ পর্যন্ত- যারা 'লোকহিতায়' এসেছেন, তাঁরা সকলেই সাধারণ লোকের ভাষায় সাধারণকে শিক্ষা দিয়েছেন। পাণ্ডিত্য অবশ্য উৎকৃষ্ট; কিন্তু কটমট ভাষা- যা অপ্রাকৃতিক, কল্পিত মাত্র, তাতে ছাড়া কি আর পাণ্ডিত্য হয় না? চলিত ভাষায় কি আর শিল্পনৈপুণ্য হয় না? স্বাভাবিক ভাষা ছেড়ে একটা অস্বাভাবিক ভাষা তয়ের ক'রে কি হবে? যে ভাষায় ঘরে কথা কও, তাতেই তো সমস্ত পান্ডিত্য গবেষণা মনে মনে কর; তবে লেখবার বেলা ও একটা কি কিম্ভুতকিমাকার উপস্থিত কর? যে ভাষায় নিজের মনে দর্শন-বিজ্ঞান চিন্তা কর, দশজনে বিচার কর- সে ভাষা কি দর্শন-বিজ্ঞান লেখবার ভাষা নয়? যদি না হয় তো নিজের মনে এবং পাঁচজনে ও-সকল তত্ত্ববিচার কেমন ক'রে কর? স্বাভাবিক যে ভাষায় মনের ভাব আমরা প্রকাশ করি, যে ভাষায় ক্রোধ দুঃখ ভালবাসা ইত্যাদি জানাই, তার চেয়ে উপযুক্ত ভাষা হ'তে পারেই না; সেই ভাব, সেই ভঙ্গি, সেই সমস্ত ব্যবহার ক'রে যেতে হবে। ও ভাষার যেমন জোর, যেমন অল্পের মধ্যে অনেক, যেমন যে-দিকে ফেরাও সে-দিকে ফেরে, তেমন কোন তৈরি ভাষা কোনও কালে হবে না। ভাষাকে করতে হবে- যেমন সাফ ইস্পাত, মুচড়ে মুচড়ে যা ইচ্ছে কর-আবার যে-কে-সেই, এক চোটে পাথর কেটে দেয়, দাঁত পড়ে না। আমাদের ভাষা- সংস্কৃতর গদাই-লস্করি চাল- ঐ এক-চাল নকল ক'রে অস্বাভাবিক হ'য়ে যাচ্ছে। ভাষা হচ্ছে উন্নতির প্রধান উপায়, লক্ষণ।
যদি বল-ও কথা বেশ; তবে বাঙ্গালা দেশের স্থানে স্থানে রকমারি ভাষা, কোনটি গ্রহণ ক'রব? প্রাকৃতিক নিয়মে যেটি বলবান হচ্ছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে, সেইটিই নিতে হবে। অর্থাৎ কলকেতার ভাষা। পূর্ব-পশ্চিম, যে দিক্ হতেই আসুক না, একবার কলকেতার হাওয়া খেলেই দেখছি সেই ভাষাই লোকে কয়। তখন প্রকৃতি আপনিই দেখিয়ে দিচ্ছেন যে, কোন্ ভাষা লিখতে হবে, যত রেল এবং গতাগতির সুবিধা হবে, তত পূর্ব-পশ্চিমী ভেদ উঠে যাবে, এবং চট্টগ্রাম হতে বৈদ্যনাথ পর্যন্ত ঐ কলকেতার ভাষাই চলবে। কোন্ জেলার ভাষা সংস্কৃতর বেশি নিকট, সে কথা হচ্ছে না- কোন্ ভাষা জিতছে সেইটি দেখ। যখন দেখতে পাচ্ছি যে, কলকেতার ভাষাই অল্প দিনে সমস্ত বাঙ্গালা দেশের ভাষা হ'য়ে যাবে, তখন যদি পুস্তকের ভাষা এবং ঘরে কথা-কওয়া ভাষা এক করতে হয় তো বুদ্ধিমান অবশই কলকেতার ভাষাকে ভিত্তিস্বরূপ গ্রহণ করবেন। এথায় গ্রাম্য ঈর্যাটিকেও জলে ভাসান দিতে হবে। সমস্ত দেশের যাতে কল্যাণ,
সেথা তোমার জেলা বা গ্রামের প্রধান্যটি ভুলে যেতে হবে। ভাষা ভাবের বাহক। ভাবই প্রধান; ভাষা পরে। হীরেমতির সাজ-পরানো ঘোড়ার উপর বাঁদর বসালে কি ভাল দেখায়? সংস্কৃতর দিকে দেখ দিকি। ব্রাহ্মণের সংস্কৃত দেখ, শবরস্বামীর মীমাংসাভাষ্য দেখ, পতঞ্জলির মহাভাষ্য দেখ, শেষ- আচার্য শঙ্করের ভাষ্য দেখ, আর অর্বাচীন কালের সংস্কৃত দেখ। এখুনি বুঝতে পারবে যে, যখন মানুষ বেঁচে থাকে, তখন জেন্ত-কথা কয়, মরে গেলে মরা-ভাষা কয়। যত মরণ নিকট হয়, নূতন চিন্তাশক্তির যত ক্ষয় হয়, ততই দু-একটা পচা ভাব রাশীকৃত ফুল-চন্দন দিয়ে ছাপাবার চেষ্টা হয়। বাপ রে, সে কি ধুম- দশপাতা লম্বা লম্বা বিশেষণের পর দুম ক'রে, 'রাজা আসীৎ'!!! আহাহা! কি প্যাঁচওয়া বিশেষণ, কি বাহাদুর সমাস, কি শ্লেষ!! ও সব মড়ার লক্ষণ। যখন দেশটা উৎসন্ন যেতে আরম্ভ হ'ল, তখন এই সব চিহ্ন উদয় হ'ল। ওটি শুধু ভাষায় নয়, সকল শিল্পতেই এল। বাড়ীটার না আছে ভাব, না ভঙ্গি; থামগুলোকে কুঁদে কুঁদে সারা ক'রে দিলে। গয়নাটা নাক কুঁড়ে ঘাড় ফুঁড়ে ব্রহ্মরাক্ষসী সাজিয়ে দিলে, কিন্তু সে গয়নায় লতা-পাতা চিত্র-বিচিত্রর কি ধুম!! গান হচ্ছে, কি কান্না হচ্ছে, কি ঝগড়া হচ্ছে- তার কি ভাব, কি উদ্দেশ্য, তা ভরত ঋষিও বুঝতে পারেন না; আবার সে গানের মধ্যে প্যাঁচের কি ধুম। সে কি আঁকাবাঁকা ডামাডোল-ছত্রিশ নাড়ীর টান তায় রে বাপ! তার উপর মুসলমান ওস্তাদের নকলে দাঁতে দাঁত চেপে, নাকের মধ্য দিয়ে আওয়াজে সে গানের আবির্ভাব। এগুলো শোধরাবার লক্ষণ এখন হচ্ছে, এখন ক্রমে বুঝবে যে, যেটা ভাবহীন প্রাণহীন- সে ভাষা, সে শিল্প, সে সঙ্গীত কোনও কাজের নয়। এখন বুঝবে যে, জাতীয় জীবনে যেমন যেমন বল আসবে, তেমন তেমন ভাষা শিল্প সঙ্গীত প্রভৃতি আপনা-আপনি ভাবময় প্রাণপূর্ণ হ'য়ে দাঁড়াবে। দুটো চলিত কথায় যে ভাবরাশি আসবে, তা দু-হাজার ছাঁদি বিশেষণেও নাই। তখন দেবতার মূর্তি দেখলেই ভক্তি হবে, গহনা-পরা মেয়ে-মাত্রই দেবী বলে বোধ হবে, আর বাড়ী ঘর দোর সব প্রাণস্পন্দনে ডগমগ করবে।
আরো সহজে বুঝে নাও 👇
১. আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকে সংস্কৃতয় সমস্ত বিদ্যা থাকার দরুন, বিদ্বান্ এবং সাধারণের মধ্যে একটা অপার সমুদ্র দাঁড়িয়ে গেছে।
ব্যাখ্যা: প্রাচীন ভারতে শিক্ষা-সংস্কৃতি মূলত সংস্কৃত ভাষায় সীমাবদ্ধ ছিল। ফলে পণ্ডিত ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিশাল ব্যবধান সৃষ্টি হয়।
২. বুদ্ধ থেকে চৈতন্য রামকৃষ্ণ পর্যন্ত— যারা 'লোকহিতায়' এসেছেন, তাঁরা সকলেই সাধারণ লোকের ভাষায় সাধারণকে শিক্ষা দিয়েছেন।
ব্যাখ্যা: যেসব মহাপুরুষ মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করেছেন, তাঁরা সাধারণ ভাষাতেই উপদেশ ও জ্ঞান প্রচার করেছেন।
৩. পাণ্ডিত্য অবশ্য উৎকৃষ্ট; কিন্তু কটমট ভাষা— যা অপ্রাকৃতিক, কল্পিত মাত্র, তাতে ছাড়া কি আর পাণ্ডিত্য হয় না?
ব্যাখ্যা: জ্ঞান অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু যদি তা কৃত্রিম, কঠিন ভাষায় প্রকাশ করতে হয়, তাহলে সেটা প্রকৃত পাণ্ডিত্য নয়।
৪. চলিত ভাষায় কি আর শিল্পনৈপুণ্য হয় না?
ব্যাখ্যা: সাধারণ ভাষায় কি জ্ঞান বা শিল্প প্রকাশ সম্ভব নয়? অবশ্যই সম্ভব।
৫. স্বাভাবিক ভাষা ছেড়ে একটা অস্বাভাবিক ভাষা তয়ের ক'রে কি হবে?
ব্যাখ্যা: প্রাকৃতিক ভাষা ছেড়ে জোর করে কৃত্রিম ভাষা তৈরি করে কোনো লাভ হয় না।
৬. যে ভাষায় ঘরে কথা কও, তাতেই তো সমস্ত পান্ডিত্য গবেষণা মনে মনে কর; তবে লেখবার বেলা ও একটা কি কিম্ভুতকিমাকার উপস্থিত কর?
ব্যাখ্যা: আমরা যেই ভাষায় চিন্তা করি, গবেষণা করি, সেটিই লেখার ভাষা হওয়া উচিত; লেখার জন্য অদ্ভুত ভাষা ব্যবহার অপ্রয়োজনীয়।
৭. যে ভাষায় নিজের মনে দর্শন-বিজ্ঞান চিন্তা কর, দশজনে বিচার কর— সে ভাষা কি দর্শন-বিজ্ঞান লেখবার ভাষা নয়?
ব্যাখ্যা: যেই ভাষায় আমরা ভাবনা ভাবি এবং আলোচনা করি, সেটিই দর্শনের বই লেখার জন্য যথেষ্ট।
৮. যদি না হয় তো নিজের মনে এবং পাঁচজনে ও-সকল তত্ত্ববিচার কেমন ক'রে কর?
ব্যাখ্যা: যদি ওই ভাষা উপযুক্ত না হয়, তাহলে আমরা তাত্ত্বিক আলোচনা করতেই পারতাম না।
৯. স্বাভাবিক যে ভাষায় মনের ভাব আমরা প্রকাশ করি, যে ভাষায় ক্রোধ, দুঃখ, ভালবাসা ইত্যাদি জানাই, তার চেয়ে উপযুক্ত ভাষা হ'তে পারেই না;
ব্যাখ্যা: দৈনন্দিন অনুভূতির প্রকাশের ভাষাই সবচেয়ে উপযুক্ত, কারণ তা প্রাণবন্ত ও বাস্তব।
১০. সেই ভাব, সেই ভঙ্গি, সেই সমস্ত ব্যবহার ক'রে যেতে হবে।
ব্যাখ্যা: ভাষাকে স্বাভাবিক ব্যবহার, ভাব এবং ভঙ্গি বজায় রেখে ব্যবহার করতে হবে।
১১. ও ভাষার যেমন জোর, যেমন অল্পের মধ্যে অনেক, যেমন যে-দিকে ফেরাও সে-দিকে ফেরে, তেমন কোন তৈরি ভাষা কোনও কালে হবে না।
ব্যাখ্যা: চলিত ভাষার শক্তি, গভীরতা, নমনীয়তা অন্য কোনো কৃত্রিম ভাষায় সম্ভব নয়।
১২. ভাষাকে করতে হবে— যেমন সাফ ইস্পাত, মুচড়ে মুচড়ে যা ইচ্ছে কর— আবার যে-কে-সেই, এক চোটে পাথর কেটে দেয়, দাঁত পড়ে না।
ব্যাখ্যা: ভাষাকে এমন গঠন করতে হবে যেন তা দৃঢ় হয়, নমনীয় হয়, এবং প্রয়োজনে কার্যকর হয়।
১৩. আমাদের ভাষা— সংস্কৃতর গদাই-লস্করি চাল— ঐ এক-চাল নকল ক'রে অস্বাভাবিক হ'য়ে যাচ্ছে।
ব্যাখ্যা: সংস্কৃতের কড়া, কঠিন ভাষা অনুকরণ করে বাংলা ভাষাও কৃত্রিম ও দুর্বোধ্য হয়ে যাচ্ছে।
১৪. ভাষা হচ্ছে উন্নতির প্রধান উপায়, লক্ষণ।
ব্যাখ্যা: ভাষাই মানুষের চিন্তা, সংস্কৃতি ও উন্নতির প্রধান মাধ্যম ও পরিচয়।
১৫. যদি বল— ও কথা বেশ; তবে বাঙ্গালা দেশের স্থানে স্থানে রকমারি ভাষা, কোনটি গ্রহণ ক'রব?
ব্যাখ্যা: অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, বাংলায় তো অনেক রকম উপভাষা রয়েছে— তাহলে কোনটি ব্যবহার করব?
১৬. প্রাকৃতিক নিয়মে যেটি বলবান হচ্ছে এবং ছড়িয়ে পড়ছে, সেইটিই নিতে হবে। অর্থাৎ কলকেতার ভাষা।
ব্যাখ্যা: প্রকৃতি যেটাকে শক্তিশালী ও জনপ্রিয় করছে— যেমন কলকাতার বাংলা— সেটিকেই গ্রহণ করতে হবে।
১৭. পূর্ব-পশ্চিম, যে দিক্ হতেই আসুক না, একবার কলকেতার হাওয়া খেলেই দেখছি সেই ভাষাই লোকে কয়।
ব্যাখ্যা: বাংলার যেকোনো দিক থেকে এলেও, কলকাতার ভাষার প্রভাবেই সবাই কথা বলে।
১৮. তখন প্রকৃতি আপনিই দেখিয়ে দিচ্ছেন যে, কোন্ ভাষা লিখতে হবে।
ব্যাখ্যা: প্রকৃতির নিয়মে বুঝে নেওয়া যায়, কোন ভাষা সাহিত্য ও লেখার জন্য উপযুক্ত।
১৯. যত রেল এবং গতাগতির সুবিধা হবে, তত পূর্ব-পশ্চিমী ভেদ উঠে যাবে, এবং চট্টগ্রাম হতে বৈদ্যনাথ পর্যন্ত ঐ কলকেতার ভাষাই চলবে।
ব্যাখ্যা: যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ভাষার আঞ্চলিক পার্থক্য কমবে এবং কলকাতার ভাষা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়বে।
২০. কোন্ জেলার ভাষা সংস্কৃতর বেশি নিকট, সে কথা হচ্ছে না— কোন্ ভাষা জিতছে সেইটি দেখ।
ব্যাখ্যা: ভাষা নির্বাচন কেবল সংস্কৃতের কাছাকাছি ভিত্তিতে নয়, কোন ভাষা এগিয়ে যাচ্ছে সেটি বিবেচ্য।
২১. তখন যদি পুস্তকের ভাষা এবং ঘরে কথা-কওয়া ভাষা এক করতে হয় তো বুদ্ধিমান অবশই কলকেতার ভাষাকে ভিত্তিস্বরূপ গ্রহণ করবেন।
ব্যাখ্যা: শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান ব্যক্তি অবশ্যই চলিত কলকাতার ভাষাকে গ্রহণ করবেন, কারণ সেটিই গ্রহণযোগ্য।
২২. এথায় গ্রাম্য ঈর্যাটিকেও জলে ভাসান দিতে হবে।
ব্যাখ্যা: নিজের এলাকার ভাষাকে বড় করে না দেখে বৃহত্তর স্বার্থে গ্রাম্য ভাষা ত্যাগ করতে হবে।
২৩. সমস্ত দেশের যাতে কল্যাণ, সেথা তোমার জেলা বা গ্রামের প্রধান্যটি ভুলে যেতে হবে।
ব্যাখ্যা: দেশের বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য নিজের জেলা বা আঞ্চলিক ভাষার গর্ব ভুলে যেতে হবে।
২৪. ভাষা ভাবের বাহক। ভাবই প্রধান; ভাষা পরে।
ব্যাখ্যা: ভাষা কেবল চিন্তা প্রকাশের মাধ্যম। প্রধান বিষয় হলো চিন্তা ও অনুভব।
(বাকিটুকু নিচে দেওয়া হলো)
২৫. হীরেমতির সাজ-পরানো ঘোড়ার উপর বাঁদর বসালে কি ভাল দেখায়?
ব্যাখ্যা: বাহ্যিক আড়ম্বর দিয়ে যদি ভিতরে কিছু না থাকে, তা হলে তা হাস্যকর হয়ে পড়ে।
২৬. সংস্কৃতর দিকে দেখ দিকি… শেষ- আচার্য শঙ্করের ভাষ্য দেখ, আর অর্বাচীন কালের সংস্কৃত দেখ।
ব্যাখ্যা: প্রাচীন কালের সংস্কৃত ছিল প্রাণবন্ত, কিন্তু আধুনিক কালের সংস্কৃত হয়েছে কৃত্রিম।
২৭. এখুনি বুঝতে পারবে যে, যখন মানুষ বেঁচে থাকে, তখন জেন্ত-কথা কয়, মরে গেলে মরা-ভাষা কয়।
ব্যাখ্যা: জীবন্ত ভাষা সবসময় প্রাণবন্ত ও ভাবপূর্ণ হয়। মৃত ভাষা হয়ে যায় প্রাণহীন ও জড়।
২৮. যত মরণ নিকট হয়, নূতন চিন্তাশক্তির যত ক্ষয় হয়, ততই দু-একটা পচা ভাব রাশীকৃত ফুল-চন্দন দিয়ে ছাপাবার চেষ্টা হয়।
ব্যাখ্যা: যখন চিন্তার শক্তি কমে যায়, তখন কিছু পুরনো ভাবকে বাহ্যিক সাজে সাজিয়ে উপস্থাপন করা হয়।
২৯. ও সব মড়ার লক্ষণ। যখন দেশটা উৎসন্ন যেতে আরম্ভ হ'ল, তখন এই সব চিহ্ন উদয় হ'ল।
ব্যাখ্যা: এগুলো হল পতনের লক্ষণ। দেশ যখন ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, তখন ভাষাও কৃত্রিম হয়ে পড়ে।
৩০. বাড়ীটার না আছে ভাব, না ভঙ্গি… গহনা-পরা মেয়ে-মাত্রই দেবী বলে বোধ হবে…
ব্যাখ্যা: শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য দিয়ে ভাব বা ভাবনা বোঝানো যায় না। আসল শক্তি আসে ভেতরের প্রাণ থেকে।
৩১. এখন বুঝবে যে, জাতীয় জীবনে যেমন যেমন বল আসবে, তেমন তেমন ভাষা শিল্প সঙ্গীত প্রভৃতি আপনা-আপনি ভাবময় প্রাণপূর্ণ হ'য়ে দাঁড়াবে।
ব্যাখ্যা: জাতি যত শক্তিশালী হবে, তার ভাষা, শিল্প ও সংস্কৃতিও তত বেশি প্রাণময় হবে।
৩২. দুটো চলিত কথায় যে ভাবরাশি আসবে, তা দু-হাজার ছাঁদি বিশেষণেও নাই।
ব্যাখ্যা: সহজ ভাষায় বলা কয়েকটি বাক্যে যত ভাব প্রকাশ করা যায়, জটিল বাক্যে তা সম্ভব নয়।
৩৩. তখন দেবতার মূর্তি দেখলেই ভক্তি হবে, গহনা-পরা মেয়ে-মাত্রই দেবী বলে বোধ হবে…
ব্যাখ্যা: ভাষা ও সংস্কৃতি যখন প্রাণময় হবে, তখন সব কিছুতেই প্রাণ ও অনুভব প্রকাশ পাবে।
পোস্ট পড়ার পর ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করতে ভুলবেন না ।
( After reading post not forgetting comments. ) 👆